কম্পিউটার ভাইরাস (Computer Virus) হল একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার কোড যা কম্পিউটারে নিজের কপি তৈরি করে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। এটি মানুষের তৈরি একটি ম্যালওয়্যার (Malicious Software) যা ব্যবহারকারীর অজান্তেই কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে।
কম্পিউটার ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য:
1. নিজেকে কপি করতে পারে – ভাইরাস নিজেই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে।
2. অন্য প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত থাকে – সাধারণত ভাইরাস কোনো ফাইল, প্রোগ্রাম বা ডকুমেন্টে লুকিয়ে থাকে।
3. ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই সক্রিয় হয় – এটি ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে পারে।
4. সিস্টেমকে ধ্বংস করতে পারে – ভাইরাস ফাইল নষ্ট করা, সিস্টেম স্লো করে দেওয়া, বা ডেটা চুরি করার মতো কাজ করতে পারে।
ভাইরাসের ধরণ:
File Infector Virus – ফাইল নষ্ট করে।
Boot Sector Virus – কম্পিউটারের বুট প্রক্রিয়াকে আক্রান্ত করে।
Macro Virus – মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেল ডকুমেন্টের মাধ্যমে ছড়ায়।
Worms & Trojans – ভাইরাসের মতো, কিন্তু আরও জটিল এবং ক্ষতিকারক।
প্রতিরোধের উপায়:
১) অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
২) অপরিচিত লিংক বা ফাইল ওপেন না করা।
৩) নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করা।
৪) ব্যাকআপ রাখা।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কাজ করে, সেটি বোঝার জন্য আমাদের একটু তার কাজের ধাপগুলো বুঝতে হবে। সাধারণভাবে, একটি ভাইরাস ৪টি ধাপে কাজ করে:
১. সংক্রমণ (Infection):
ভাইরাস কোনো একটি হোস্ট ফাইল বা প্রোগ্রামে ঢুকে পড়ে। এটা হতে পারে:
একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করার মাধ্যমে,
ইমেইলের সংযুক্তি খুলে,
ইউএসবি বা ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড করে।
ভাইরাস তখন নিজেকে ওই ফাইলের মধ্যে “এম্বেড” করে ফেলে।
২. সক্রিয় হওয়া (Execution):
যখন ব্যবহারকারী সেই আক্রান্ত ফাইল বা প্রোগ্রাম চালায়, তখন ভাইরাস সক্রিয় হয়। একবার সক্রিয় হলে ভাইরাস কম্পিউটারে নিচের কাজগুলো করতে পারে:
নিজেকে অন্যান্য ফাইল বা ড্রাইভে কপি করে ছড়ানো।
নির্দিষ্ট সময়ে কোনো কমান্ড চালানো (যেমন, ফাইল মুছে ফেলা)।
সিস্টেমকে ধ্বংস বা ধীর করা।
৩. প্রসার (Replication & Spreading):
ভাইরাস তার কপি তৈরি করে অন্যান্য ফাইল, প্রোগ্রাম, ইমেইল, ইউএসবি বা নেটওয়ার্কে পাঠিয়ে নিজেকে ছড়ায়। এটি একধরনের self-replicating behavior।
৪. ক্ষতি (Payload Execution):
১) ভাইরাসের মূল উদ্দেশ্য অনুযায়ী এটি ক্ষতি করতে পারে:
২) ফাইল বা সিস্টেম ডিলিট করা,
৩) ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা,
৪) কম্পিউটারকে হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া (botnet),
৪) অথবা শুধু বিরক্তিকর পপ-আপ দেখানো।
উদাহরণ:
ধরুন, আপনি একটি ম্যালওয়্যার-আক্রান্ত গেম ইনস্টল করলেন। ইনস্টল করার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস সক্রিয় হয়ে গেলো। এটি আপনার কম্পিউটার থেকে পাসওয়ার্ড চুরি করে হ্যাকারকে পাঠিয়ে দিলো, এবং আপনার বন্ধুর ইমেইলে নিজের কপি পাঠাতে শুরু করলো।
ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়:
১) অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন এবং আপডেট রাখুন।
২) অপরিচিত ফাইল বা লিংক খুলবেন না।
৩) সফটওয়্যার শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে ডাউনলোড করুন।
৪) নিয়মিত ব্যাকআপ নিন।